ডা. কামরুল আখতার সঞ্জু
শৈশব কেটেছে পাবনার বেড়ার বনগ্রামে। বেড়া বি বি স্কুলে আব্বার
চাকরীর সুবাদে সেখানে। নিজের দুই মামার বাইরে আমাদের আরেক
মামা ফজল-এ-খোদা। বড় মামা সুজানগরের সাতবাড়ীয়ায় আর ছোট
মামা ইংল্যান্ডে। ফজল-এ-খোদা মামাও ঢাকায় থাকতেন। আমরা
থাকতাম উনাদের বাড়ীতে। একপাশে দিলু মামাদের বাড়ী- স্বর্গগত
তিনি বি বি স্কুলের জনপ্রিয় অংকের শিক্ষক ছিলেন। আরেক পাশে
কনা মাসীদের বাড়ি। পেছনেই ইছামতি নদী। কত মধুর সেই শৈশব।
প্রতি শীতেই দীর্ঘ ছুটি নিয়ে স্বপরিবারে দেশে আসতেন ফজল-এ-
খোদা মামা। মঞ্জু মামীমা মাতৃসম স্নেহ করতেন। সবুজ ভাই, সজীব
আর অনুজ এবং আমরা ছোট দুই ভাই । এই পঞ্চ রত্নের যন্ত্রণায়
সবাই অস্থির। বাড়ীতে সে সময় বিশাল উৎসবের আমেজ। গান
আবৃত্তি প্রতি রাতে আয়োজন। মামা প্রখ্যাত গীতিকার এবং
বেতারে চাকুরির জন্য এলাকার সব শিল্পীদের মেলা বসত বাড়িতে।
গানের আয়োজনে অনেক সময় মধ্য রাত্রি
পার হয়ে যেত। ঢাকা থেকেও অনেকে গেছেন। সদ্য প্রয়াত আব্দুল
জব্বারের পাশে বসে গান শোনার স্মৃতিও ভুলবার নয়। ঢাকায় মামার
বাসায় বেড়াতে এসেছি কয়েক বার। প্রথম কোমল পানীয় খাবার
স্বাদ এখনও জিভে লেগে আছে। তখন এয়ারপোর্ট ছিল তেজগাঁ।
মামার আগারগাঁ পি ৭ বাসার কাছেই রানওয়ে। তখন এত নিরাপত্তা
কড়াকড়ি ছিল না। প্লেন নামলেই দৌড়ে রানওয়ে। আকাশের
উড়োজাহাজকে মাটিতে ছুঁয়ে দেখা। মামার সাথে রেডিও বাংলাদেশ
(বাংলাদেশ বেতার) ঘুরে দেখা আরেক রোমাঞ্চকর বিষয়- বিশেষ
করে ছোটদের অনুষ্ঠান কলকাকলিতে অংশগ্রহন। কত শত মধুর
স্মৃতি।
করোনার থাবায় মামা চলে গেলেন চিরদিনের মত। আশি বছরের
সংগ্রামী জীবন থেমে গেল। করোনা এক অদ্ভুত রোগ। স্বশরীরে
ঝাঁপিয়ে পড়ে চিকিৎসা দিতে পারলাম না। পিপিই এর নিরাপত্তা
ঘেরাটোপে চিকিৎসা। যদিও হাইফ্লো অক্সিজেন, আইসিইউ সব
ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু অসীমের পানে মামা চলে গেলেন। শহীদ
ভাইয়ের স্মৃতির চরণে তার হৃদয় রেখেছিলেন- সম্ভবতঃ তাঁর মত
করে খুব বেশী কেউ স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের কথা বলেন নি-
‘সালাম সালাম হাজার সালাম শহীদ ভাইয়ের স্মরণে-‘।
কত মানুষ রাষ্ট্রীয় পদক পায়- কিন্তু সালাম সালাম হাজার সালাম
গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা তাঁর জীবদ্দশায় কোন রাষ্ট্রীয়
স্বীকৃতি পেলেন না।
মৃত্যুর পর আমরা যেন তাঁকে ভুলে না যাই।