![](https://fazlekhuda.com/wp-content/uploads/2023/04/Nasrin.jpg)
নাসরিন মুস্তাফা
দু’দিন আগে যখন শুনলাম ওয়াসিফ ভাইয়ের পরিবারে করোনা হানা
দিয়েছে, চাচী, শিশুসাহিত্যিক মাহমুদা সুলতানাকে হাসপাতালে ভর্তি
করতে হল, তখনো ফজল-এ-খোদা চাচাকে নিয়ে ভাবিনি। তাঁকে নিয়ে
আমার ভাবনায় কেবলি ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গান, জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে গান সৃষ্টির সাথে নিজে
জড়িত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া ফজল-
এ-খোদা আমার ভাবনায় কেবলি সৃষ্টিশীল একজন মানুষ, যিনি
আছেন, যিনি থাকেন আমার এবং আমাদের ভাবনায়।
‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গান সৃষ্টির ইতিহাস পড়েছিলাম তাঁর
লেখায়ঃ
‘জব্বার গানটি খুব মনোযোগ দিয়ে দু-তিনবার পড়ল। বলল- এই না
হলে কবি। কবি, তুমি দারুণ লিখেছ। চল, গানটিকে এবার ধার দিতে
হবে।
সবুজের মা এত বলল-চা খেয়ে যান জব্বার ভাই।
আরেকদিন এসে খাব- বলেই আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে তার
বাসায় তুলল জব্বার। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে বসলাম। উঠলাম
সেই সন্ধ্যায়-সন্ধ্যা তখন ঘোর হয়ে গেছে। মাঝে একবার জব্বারের
স্ত্রী কিছু খাবার দিয়ে গেছে।
এবার চল বাবার কাছে-মানে বঙ্গবন্ধুর কাছে। বাবা পাশ করে দিলে
কালই রেডিওতে রেকর্ড করব। চললাম ৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধুর
সঙ্গে দেখা হলো রাত এগারোটায়। তিনি গান শুনলেন এবং বললেন-
যা, কাল থেকে রেডিওতে এ গানটি বাজাতে শুরু কর।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে
‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গেয়েছেন নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা।
গভীর আনন্দ ছুঁয়ে গেছে আমাকে। কালজয়ী এই গান সব সময় যেমন
নতুন, এই গানের লেখক ফজল-এ-খোদাকেও আমার স্থির সময়ের
বাসিন্দা বলে মনে হত। তাই তিনি করোনা আক্রান্ত, হাসপাতালে
নিতে হয়েছে শুনেও অন্য কিছু ভাবতে পারিনি।
এক মহাকালীন ডিলেম্যা থেকে ঝড়ো ধাক্কায় পতন ঘটলো আজ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়াসিফ ভাই-এর ম্যাসেজ- আমার বাবা আর
নেই। ভোর চারটায় চলে গেছেন।
ফজল-এ-খোদা বাবা-ও! বাবা চলে গেছেন! বুকের মাঝখানে গভীর
শূন্যতা, কেননা বাবা চলে গেলে কিছু থাকে না। ছোটবেলায়
শুনেছিলাম-বটবৃক্ষের ছায়া যেমন, মোর বন্ধুর মায়া তেমন!
বটবৃক্ষের ছায়া তো বাবা ছাড়া আর কারোর হয় না।
ফজল-এ-খোদার তিন ছেলে, বড় ছেলে ওয়াসিফ ভাইয়ের তিন কন্যার
প্রিয় দাদু তিনি। সবার মাথার উপর থেকে বটবৃক্ষের ছায়া সরে
গেছে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি
গাইবে আগামী সব প্রজন্ম। প্রতিদান হিসেবে ফজল-এ-খোদাকে
একটি জাতীয় পুরস্কারও দেয়নি এই দেশ। নির্বিরোধী, মুখচোরা,
সহজ সরল মানুষটি অনেকের মত বাতাস গরম করে নিজের প্রাপ্য
আদায় করতে পারেননি। বরঞ্চ অকৃতজ্ঞ ধান্দাবাজের ব্যক্তিগত
আক্রমণের শিকার হয়েছেন। প্রকৃত কীর্তিমানকে সম্মানিত করতে
না পারা, তাঁকে আঘাত করার হীন প্রচেষ্টার সংস্কৃতি আসলে
জাতীয় লজ্জা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফজল-এ-খোদার মত ভালো মানুষ কেবল তাঁর পরিবারের জন্যই
বটবৃক্ষের ছায়া ছিলেন না, বাংলাদেশ নামের দেশটিকে জন্ম
দিয়েছেন, বার বার আসা আঘাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন।
বাংলাদেশ এই বটবৃক্ষের ছায়া হারিয়ে ফেলেছে আজ।
ওপারে ভালো থাকুন ফজল-এ-খোদা। তাঁর মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধুকন্যা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর
স্নেহধন্য এই মানুষটির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক
জানাচ্ছেন অনেকেই। কী গভীর ভালোবাসা তাঁর প্রতি সবার। এই
ভালোবাসা তাঁর ছায়া হারানো পরিবার ও দেশকে শক্তি জোগাক্ শোক
সইবার, এই কামনা করি।