স্মৃতিকথা
ফজল ভাইয়ের সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল
– গাজী মাজহারুল আনোয়ার
দৈনিক কালের কণ্ঠ, ৫ জুলাই ২০২১, সোমবার
ফজল-এ-খোদা ছিলেন গুণী গীতিকার। ছিলেন সৃজনশীল মনের মানুষ। আমরা প্রায় একই সময়ে গান লেখা শুরু করেছিলাম। তবে গানে তিনি আমার আগে এসেছেন, না আমি—সেটা মনে করতে পারছি না।
বিটিভির ক্যান্টিনে খুব আড্ডা হতো আমাদের। নিরহংকারী মানুষ ছিলেন। পেশার কারণে অনেকেই হয়তো তাঁকে হিংসা করতেন। তিনি কিন্তু হিংসা করার মতো মানুষই ছিলেন। সত্তরের দশকের শুরুতে একের পর এক ভালো কথার গান উপহার দিচ্ছিলেন। শ্রোতাপ্রিয়তাও পাচ্ছিল। তা ছাড়া স্বাধীনতাযুদ্ধে তো তাঁর গান ‘সালাম, সালাম হাজার সালাম’ ইতিহাস তৈরি করেছিল। ফজল-এ-খোদা সব সময় হাসিখুুশি থাকতেন। কারো সাতে-পাঁচে ছিলেন না। নিজের কাজটিই করে গেছেন সব সময়। আমরা যখন নাক ডুবিয়ে শুধু গান লিখে গেছি, তখন তিনি একই সঙ্গে কবিতা, ছড়া, এমনকি নিয়মিত কলাম লিখে গেছেন পত্র-পত্রিকায়। আমি মনে করি তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। মাঝখানে অনেক দিন ফজল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। আমিও তেমন ঘর থেকে বের হতাম না। তিনিও খুব একটা কোথাও যেতেন না। ফলে যোগাযোগটা কমে যায়। কিছুদিন আগে একবার শুনেছিলাম তিনি অসুস্থ। আর এখন হঠাৎ শুনলাম তিনি নেই!
ফজলে ভাইকে আমি প্রতিদ্বন্দ্বীর বদলে সহকর্মী ভাবতাম। দুজনে গান নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। আধুনিক গানের শব্দ বিন্যাস, শব্দ চয়ন, ছন্দ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা হতো। এখনকার গীতিকাররা সেটা করেন কি না আমার জানা নেই!
ফজল ভাই বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তিনি ওপারে ভালো থাকুন।
লেখক পরিচিতি: একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত গীতিকার, তিনি বিশ হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ তাঁর রচিত তিনটি গান বিবিসি’র জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি গানের মধ্যে স্থান পায়।
এই লেখার লিঙ্ক–
https://www.kalerkantho.com/print-edition/rangberang/2021/07/05/1049964