"সালাম সালাম হাজার সালাম" গানের রচয়িতা

Fazl-E-Khuda (1941 – 2021)

Short biography of Fazl-E-Khuda

একজন দেশপ্রেমিক, সংগ্রামী এবং সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন কবি ফজল-এ-খোদা। তাঁর জীবনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

  • জন্মতারিখ: ৯ মার্চ ১৯৪১, পাবনা
  • পিতা: মহম্মদ খোদা বক্স
  • মাতা: মোসাম্মাৎ জয়নবুন্নেছা 
  • শিক্ষা: নানা কারণে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি।
  • বিয়ে: ১৯৬৬ সালে গল্পকার মাহমুদা সুলতানাকে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন পুত্র সন্তান আছে।
  • কর্মক্ষেত্র: ১৯৬১ সালে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান, ঢাকায় কর্মজীবন শুরু। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বেতার-এর পরিচালক হিসেবে অবসরগ্রহণ।
  • সংগঠক: শিশু সংগঠন ‘শাপলা শালুকের আসর’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শিশু-কিশোরদের কাছে ‘মিতাভাই’ হিসেবে পরিচিত।
  • পত্রিকা সম্পাদনা:
    • বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রকাশিত বাংলা মাসিক ‘বেতার বাংলা’র প্রথম সম্পাদক।
    • বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রকাশিত ইংরেজি মাসিক দইধহমষধফবংয ইবঃধৎদ-এর প্রথম সম্পাদক।
    • শিশু সংগঠন শাপলা শালুক আসরের মাসিক শিশু বিষয়ক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’-এর আমৃত্যু সম্পাদক।
    • মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সৈনিক। তিনি ২নং সেক্টরে সংঘটিত বিভিন্ন রণাঙ্গণে সম্মুখ সমরে অংশ নেন।
  • সাহিত্য কর্ম:
    • কবিতা: ৫টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। কলকাতা’র ‘দেশ’ পত্রিকাসহ দেশের সকল পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা ছাপা হয়েছে।
    • গান: ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর গান ‘সালাম সালাম হাজার সালাম, সকল শহীদ স্মরণে’র রচয়িতা। এছাড়াও তাঁর বহু দেশাত্ববোধক, আধুনিক ও ইসলামী গান রয়েছে। ২০০৬ সালে বিবিসি’র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের জরিপে সেরা ২০টি গানের তালিকায় ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ১২তম স্থান লাভ করে।
    • শিশুসাহিত্য: শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া, কবিতা, গল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ফজল-এ-খোদা রেডিও এবং টেলিভিশনের বহু অনুষ্ঠানের পরিকল্পক, লেখক ও নির্দেশক ছিলেন।
  • গ্রেফতার ও পদাবনতি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ১৯৭৫ সালের ৩ অক্টোবর ফজল-এ-খোদা’কে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ‘বঙ্গবন্ধু বেতার কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগ আনা হয়। কিছুদিন পর তিনি এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেও বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে চাকুরি জীবনে নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছিল।

    পুুরস্কার: কবি ফজল-এ-খোদা’কে সরকার ২০২৩ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত করে।

  • মৃত্যু: তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ৪ জুলাই শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে  পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০। তাঁর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দল শোক প্রকাশ করেন।

তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু কথা

কবি ফজল-এ-খোদা আমৃত্যু একজন সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। তিনি কখনো কোনো প্রলোভনে আর্দশচ্যুত হননি এবং আজীবন প্রগতিবাদী ছিলেন। দেশের সকল সাংস্কৃতিক ও মানবিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। একাত্তরে সরকারি চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। এ জন্য একাত্তরের ৪ এপ্রিল তাঁকে তাঁর কর্মস্থল রেডিও পাকিস্তান থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সরকারি প্রচার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণেও বাধা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে তিনি বঙ্গবন্ধুকে উপলক্ষ করে নিজের মনের দু:খ-কষ্ট-ক্ষোভ প্রকাশ করে কিছু গান রচনা করেন। এরকম একটি গানের প্রথম কয়েকটি লাইন হচ্ছে- ‘ভাবনা আমার আহূত পাখির মতো/পথের ধুলোয় লুটোবে/সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন বিহঙ্গ/সহসা পাখনা গুটোবে/এমন তো কথা ছিল না’। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে রচিত এ গানটি সম্ভবত এদেশে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে রচিত ও গীত প্রথম গান। এ গানটি পরবর্তী সময়ে বশির আহমেদের সুরে এবং মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের কণ্ঠে প্রচারিত হয়েছে।