"সালাম সালাম হাজার সালাম" গানের রচয়িতা

Fazl-E-Khuda (1941 – 2021)

সালাম সালাম হাজার সালাম, ফজল-এ-খোদা!: আহমেদ বাবলু 

Ahmed Bablu

সালাম সালাম হাজার সালাম, ফজল-এ-খোদা! 

আহমেদ বাবলু 

ফজল-এ-খোদা বাংলাদেশের কালজয়ী বেশকিছু গানের গীতিকার। তিনি যে পরিমাণ গান লিখে গেছেন সে তুলনায় জনপ্রিয় গানের সংখ্যা হয়ত কম, কিন্তু একজন স্রষ্টার জন্য ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী দাগ রেখে যেতে ভুরিভুরি সৃষ্টি না হলেও যে চলে ফজল-এ-খোদা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এটা জোর দিয়েই বলা যায় যে যতদিন বাংলাদেশ নামে এই রাষ্ট্রটি টিকে থাকবে আর তার ভাষা হবে বাংলা হয়ত ততদিনই ফজল-এ-খোদা বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টি নিয়ে। আর যে সৃষ্টিটি তাঁকে বিশেষ ভাবে অমর করে রাখবে তা অবশ্যই তাঁর লেখা ও মোঃ আব্দুল জব্বারের সুরে ও কণ্ঠে সেই কালজয়ী গান –

সালাম সালাম হাজার সালাম

   সকল শহীদ স্মরণে,

আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই

   তাদের স্মৃতির চরণে।।

শহীদের চরণে রেখে যাওয়া এই গীতিকারের হৃদয় স্থায়ীভাবে বাঙালি শ্রোতার হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছে নিশ্চিত।

( গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০ গানের তালিকায় ১২তম স্থান জায়গা করে নিয়েছিল।}  

সম্ভবত উপরে উল্লেখিত গানটির পরেই জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে চলে আসবে ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া মাসুদ পারভেজ পরিচালিত ‘এপার ওপার’ চলচ্চিত্রের সেই গান

ভালবাসার মূল্য কত

আমি কিছু জানি না

এ জীবন তুল্য কি তার

আমি সে তো বুঝি না

গানটির শিল্পী ও সুরকার আজাদ রহমান। 

যদিও এই একই ছবিতে ব্যবহৃত আরেকটি গানও আমার ভীষণ প্রিয়

মন রেখেছি আমি তার মনেরও আঙ্গিনায়

কেউ ডেকো না আমায় কেউ খুঁজো না আমায়।।

বিশেষ করে গানের অন্তরায় এসে একটি উপমা আমার কাছে অদ্ভুত সুন্দর মনে হয়-

সোনালি ধানের রঙ মেখে সেজেছে রূপসী ললনা…

প্রেমিকার রূপ বর্ণনায় সোনালি ধানের রঙ কল্পনা করা অভূতপূর্ব ব্যাপার!

এ ছাড়াও এই গানটির চিত্রায়ণ ও লোকেশন, নায়ক সোহেল রানার একপ্রেশন, আজাদ রহমানের মায়াবি সুর আর আব্দুল জব্বারের মোহণীয় কণ্ঠ, সব মিলিয়েই গানটিকে চমৎকার করে তুলেছে।

আব্দুল জব্বারের গাওয়া আর ফজল-এ-খোদার লেখা আরেকটা গানের কথা উল্লেখ করি, যারা বাংলা গানের প্রবীণ শ্রোতা, বাংলাদেশ বেতারে গান শোনার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তাঁরা  হয়ত দ্রুত কানেক্ট করতে পারবেন এই গান। এক সময় আধুনিক গানের আসরে প্রায়ই এই গানটি বাংলাদেশ বেতারে শোনা যেতো- 

ভাবনা আমার আহত পাখির মতো

পথের ধূলোয় লুটোবে..

সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন বিহঙ্গ

সহসা পাখনা গুটোবে

এমন তো কথা ছিলো না..

আলোর কামনাগুলি সূর্যশিখা হয়ে

আনন্দ ফুলঝুরি ছড়াতো     

গানের বাঁশরি হয়ে  সুরের আকাশ খানি

তারার জোছনায় ভরাতো

বৈশাখি মেঘে মেঘে চন্দ্র সূর্য ঢেকে

আচমকা আঁধার জুটোবে

এমন তো কথা ছিলোনা…

গানটির সুর করেছিলেন বাংলাদেশের আরেকজন দিকপাল শিল্পী ও সুরকার  – বশীর আহমেদ। 

জানা যায়  “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হলে ফজল-এ- খোদা তাঁর দুঃখ এবং ক্ষোভ এই গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেন।”  

(বাংলা ট্রিবিউন ০৪-০৭-২০২১)

বশীর আহমেদের নামটা যখন এলোই তখন ফজল-এ-খোদা রচিত বশীর আহমেদের সুর ও গায়কীতে ১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মোস্তফা মেহমুদের পরিচালনয়া “মানুষের মন” সিনেমার সেই সময়ে শ্রোতাপ্রিয় আরেকটি গানের দুটি লাইন দিয়ে এই গীতিকারের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষ করি-

মানুষের গান আমি শুনিয়ে যাব

কেউ আমার কথা ভাবো কি না ভাবো 

মানুষের গান আমি শুনিয়ে যাব…

নির্মম বাস্তবতা হলো করোনা আক্রান্ত হয়ে আজ ৪ জুলাই ২০২১ ভোরেই তিনি চিরবিদায় নিয়েছেন। চাইলেও মানুষের জন্য আর কোনো নতুন গান তিনি শোনাতে পারবেন না! কিন্তু আমরা জানি ফজল-এ-খোদা বাংলার মানুষের জন্য, আমাদের মতো শ্রোতাদের জন্য, যেসব গান লিখে রেখে গেছেন তা আরও অনেক অনেক দিন শুনে যাব আমরা। 

সালাম সালাম হাজার সালাম এই গীতিকারকে। 

 ০৪-০৭-২০২১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *